Notification texts go here Contact Us Buy Now!

মেঘপাখি – আব্দুল্লাহ মাহমুদ নজীব PDF Download

Please wait 0 seconds...
Scroll Down and click on Go to Link for destination
Congrats! Link is Generated

 



পঞ্চম কি ষষ্ঠ সেমিস্টারের মিডটার্ম চলছে তখন। এক সকালে মাসুম ও আমি ডাকসুতে বসে আছি মারুফের অপেক্ষায়। পাশের টেবিলে কয়েকজন শিক্ষার্থী উচ্চৈঃস্বরে আড্ডা দিচ্ছিলেন। কথাবার্তায় মনে হচ্ছিল তাঁরা ইংরেজি বিভাগে পড়েন। জন কীটস এর। বিখ্যাত The Human Seasons কবিতা নিয়ে তাঁদের মধ্যে একজন মিনিট দশেকের ভেতর এত সুন্দর ‘সামারাইজিং’ করলেন যে, আমি অভিভূত হয়ে গেলাম। চারটা ঋতুর সাথে মানুষের জীবনকে চমৎকারভাবে মিলিয়ে দেখাচ্ছিলেন তিনি। মাথায় এলাে, আমিও তাে একটা বই লিখেছি, যেখানে গ্রীষ্মের সূর, বৃষ্টির সুর, বসন্তের সুরায় জীবনকে দেখার চেষ্টা করেছিলাম। শুনেছি, সেইসব গল্প পাঠকদের একেবারে মন্দ লাগেনি। বাকি তিন ঋতু তবে বাদ রেখেছি কেন? তাদের নিয়েও তাে গল্প করতে পারি! শীত নিয়ে লেখার চিন্তা বেশ আগে থেকে ছিল। কিন্তু এ দেশের অধিকাংশ অঞ্চলেই ছয় ঋতুকে আলাদা করে চেনা যায় না এখন। শরৎ-হেমন্তকে ঘিরে বিশদ আকারে কিছু লেখার চিন্তা তাই আমি করিনি। অচেনা ছেলেগুলাের আড্ডা আমাকে অনুপ্রাণীত করল: এই ঋতুগুলােও তা হলে ভাবনার উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে। ক্যাফেটেরিয়ার টেবিলে বসে সেদিনই আল্লাহর ওপর ভরসা করে এই বইয়ের বীজ বপন হলাে। কিন্তু সেই বীজের অঙ্কুরােদগম হতে দেরি হচ্ছিল।


দুয়ারে এলাে বছরের সেরা মাস। পুরাে মাসজুড়ে সবার সাওয়াব অর্জনের দৃশ্য দেখে গেলাম। আব্ব যাকাত দিলেন। চাক্ষুরা যাকাত দিলেন। আমার অনেক বন্ধুও যাকাত দিয়েছে। আল্লাহ আমাকে নিসাব পরিমাণ অর্থ দেননি। একটা ছােটোখাটো মনখারাপের অনুভূতি ভেতরে জায়গা পেল, যাকাত দিতে পারার সৌভাগ্য থেকে আমি বঞ্চিত থাকব? দুশ্চিন্তার কালােমেঘ থেকে একটা ঝুমবৃষ্টির দেখা মিলল। বৃষ্টির নাম বিশর আল-হাফি।


বিশর আল-হাফির নাম অনেকে শুনে থাকবেন। বড় মাপের যাহিদ ব্যক্তি ছিলেন। হাদীসের পাঠও দিতেন। তিনি ছাত্রদের বলতেন, ‘হাদীসেরও যাকাত আছে। তােমরা যাকাত দাও। মানে বুঝলেন? একশাে টাকায় যেমন আড়াই টাকা যাকাত দিতে হয়, হাদীসের ছাত্রদের উচিত একশােটা হাদীস শিখলে অন্তত দুই-তিনটা হাদীস মানুষের মাঝে বিতরণ করা। এটাই হাদীসের যাকাত৷ জ্ঞানচর্চা ও পঠন-পাঠনে ওনাদের যে কমিটমেন্ট’ আর ‘ডেডিকেশন’, আমরা তার ধারেকাছেও নেই; ফলে তাঁদের এমনতরাে উপলব্ধি ও দৃষ্টিভঙ্গিগুলােকে অনেক সময় প্রগলভতা মনে হতে পারে। তাঁর বাতলে দেওয়া উপায়টা বাস্তবায়ন করব কীভাবে? সঙ্গে থাকা মুতাকিফদের সাথে বেশ কিছু হাদীস শেয়ার করা হলাে। কিন্তু আমার যাকাত আরেকটু বেশি জমে আছে। কী করা যায়? গল্প বলতে বলতে কিংবা লিখতে লিখতে হাদীসে ঢুকে পড়ার অভ্যাস আছে। গল্পই তা হলে লিখি। তিন ঋতুকে নিয়ে গল্প করার যে ইচ্ছা ছিল, সেটা এই সুযােগে মিটিয়ে ফেলি। আল্লাহ তাওফীক দিয়েছেন। প্রশংসার সবটুকু তাঁর। এতদিন বই পড়ে যারা আমাকে দুআ দিয়েছেন, এবার বিশর আল-হাফির জন্যে প্রথমে দুআ করবেন।


এই বইয়ের লেখাগুলােতে মজলিসি ঢঙ ঠিক রাখার প্রচেষ্টা ছিল। পরিবারে পিচ্চিপাচ্চাদের সাথে বসে যেমন গল্প করি, অনেকটা তেমন। তবে লেখাগুলাে পিচ্চিপাচ্চাদের উপযােগী নয়, লেখকের সমবয়সী তরুণ অথবা অনুজপ্রতিম প্রাগ্রসর কিশােরদের জন্য বিশেষভাবে উপাদেয় হতে পারে। দ্বীনপ্রিয় কিশাের-তরুণদের সাথে গল্প করার অভ্যাস লেখাগুলাের মাঝে ছাপ ফেলেছে সম্ভবত। গল্পের আবর্তন নির্দিষ্ট কক্ষপথকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়নি। সূচনাটা আমি করেছি, এরপর ভাবনার বৈতরণী লক্ষ্যহীন যাত্রা করেছে। কল্পনার বাতাস যেদিকে টেনেছে তার পাল, আমিও সেদিকে ধরেছি হাল। গল্পগুলাে একেবারে সমান্তরাল রাখতে চাইনি। নকশাবিহীন কাঁথা আমার পছন্দ নয়। গল্পের কাঁথাও ফুল-ফলের নকশা ছাড়া ভালাে দেখায় না। সেই নকশার রূপরেখা আমরা নিয়েছি কুরআন ও সুন্নাহ থেকে। সেলাইয়ের সুই-সুতাে সংগ্রহ করা হয়েছে। বিভিন্ন ভাষার সাহিত্যপাড়ায় ঘুরে। গত কয়েক বছরে লেখকের পঠিত সেরা পঙক্তিগুলাের কিয়দাংশ এখানেই পেয়ে যাবেন। গদ্য পড়তে অভ্যস্ত পাঠক লেখার মাঝে কবিতা দেখে অস্বস্তিতে ভােগেন। তবে এই বইয়ে উদ্ধৃত পদ্যগুলাে যথেষ্ট ঋজু


ও গদ্যময়, একেবারে খারাপ লাগার মতাে নয়। কাব্যানুবাদে সেই ঋজুতা ধরে রাখার চেষ্টা ছিল। নিবিষ্ট পাঠকের জন্যে বইটি হতে পারে তুলনামূলক বিশ্বসাহিত্য পাঠের প্রাথমিক প্রস্তুতি। ফিকশনাল বইয়ে অভ্যস্ত পাঠকদের কাছে একটা বিষয় খটকা লাগবে। কাল্পনিক গল্পের বেশিরভাগ অনুষঙ্গকে ঘিরেই অকাল্পনিক সত্তা খুঁজে ফেরার এই কোশেশ কেন? আল্লাহর কথা কিংবা নবিজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সীরাত এভাবে প্রাসঙ্গিক করে দেখানাে গল্পের ঢঙের সাথে কি যায়? এই প্রশ্ন আসা যৌক্তিক। আপনাদের জ্ঞাতার্থে আমি কয়েকটি পঙক্তি ও তার কাব্যানুবাদ পেশ করতে চাই। জাহিলি আরবের প্রবাদপ্রতিম কবি আনতারা লিখেছেন :


(রক্তপিপাসু বর্শা যখন ডেকেছে আমার মরণ ভারতীয় সাদা তরবারি দেহে করেছে রক্তক্ষরণ যুদ্ধের সেই কঠিন সময়ও তােমাকে করেছি স্মরণ। উজ্জ্বল সব তরবারিগুলাে ঝলকে উঠেছে যত হাসার সময় চকচক করা তােমার দাঁতের মতাে মনে হলাে আজ তরবারিকেই চুমু খাই অবিরত।)


আনতারা কোনাে এক যুদ্ধে লড়াইরত ছিলেন। খুন ঝরানাে যুদ্ধের বিপদসঙ্কুল সময়ে প্রেমের কথা বলা একেবারে বেমানান। প্রাণঘাতী সমরে আঘাত-প্রতিঘাতের মাঝে প্রেমিকার কথা মনে হওয়াটাও অসম্ভব। কিন্তু হৃদয় যখন কোনাে কিছুতে সম্মােহিত হয়, স্থানের দূরত্ব বা সময়ের বিরতি সেখানে খাদ আনতে পারে না। চকচক করা উজ্জ্বল তরবারি দেখেই আনতারার মনে পড়েছে তার প্রেয়সীর মুক্তোজ্জ্বল দাঁতের কথা। কল্পনা যেহেতু তরবারিতেই প্রেয়সীর মুখ দেখিয়েছে, এখন সেই তরবারি চুম্বনেই আনতারা ভীষণ আকুল।


ভালােবাসার ব্যাকরণটা এমনই৷ যেখানে যে অবস্থায় থাকুক, ভালােবাসার মানুষ বা বস্তুকে খুঁজে ফেরার তাড়না আর অনুভব করার প্রেরণা কখনও নিষ্ক্রিয় হয় না। প্রকৃতির রূপ-রস নিঙড়িয়ে গল্প যখন করছি, তখন প্রকৃতির প্রতি মুগ্ধ হচ্ছি বটে, কিন্তু চূড়ান্তভাবে অনুভব করছি এই সুন্দর প্রকৃতির স্রষ্টাকেই৷ আমরা যেহেতু তাঁকে ভালােবাসি, ক্ষণে ক্ষণে তাঁর কথা স্মরণে আসা, তাঁর প্রিয়তম রাসূলকে মনে পড়া একেবারেই স্বাভাবিক। আপনাদের চোখে আপাতদৃষ্ট ‘অপ্রাসঙ্গিকতা’র এই হলাে কৈফিয়ত। ‘বৃষ্টিমুখর রৌদ্রমুখর’-এর মতাে এখানেও উত্তম পুরুষ সর্বনাম ব্যবহৃত হয়েছে গল্পের কথক হিসেবে। এই ‘আমি’টা ব্যক্তিলেখক নন, তবে কিছুক্ষেত্রে লেখকের ব্যক্তিগত স্মৃতি বা অভিজ্ঞতার ছাপ প্রচ্ছন্ন। এখানে বিবৃত পল্লীপ্রকৃতির বর্ণনা তিনটি মূল উপাদান থেকে উৎসারিত: প্রথমত আমার শৈশব স্মৃতি ও আপন গ্রামের হারিয়ে যাওয়া নৈসর্গিক চিত্র, দ্বিতীয়ত বাঙলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল ভ্রমণের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, তৃতীয়ত নিজস্ব কল্পনা। পরিবেশ-প্রকৃতি ও এতদসংক্রান্ত বিভিন্ন লেখাজোঁকা নিয়ে আমার প্রবল আগ্রহ, সেসবের ভূমিকা আছে এই কল্পনার বিকাশে। যথাস্থানে উৎসগুলাের বিবরণ পাবেন। চাঁদপুরের বন্ধু নিয়ামাত উল্লাহ, যশােরের বন্ধু মহিউদ্দীন, পল্লীভ্রমণের সাথি কথাশিল্পী আরিফুল ইসলাম ও কবি আবু সালেহ মাসুম—সবার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা ও ভালােবাসা।


আল্লাহ যেন আমার ছােটো কাজটা গ্রহণ করেন, এটাকে আমার গােনাহমাফের উপলক্ষ বানান—দুআ করবেন। সংশােধনী বা কোনাে দৃষ্টিআকর্ষণী থাকলে অনুগ্রহপূর্বক জানিয়ে কৃতার্থ করবেন।


মেঘপাখির আকাশে আপনাকে স্বাগতম।


আব্দুল্লাহ মাহমুদ নজীব পদ্মা-২০০৫, বিজয় একাত্তর হল, ঢাবি জানুয়ারি ১৬, ২০২০ ঈসাব্দ।


মেঘপাখি

ভাের হয়েছে। উঠোনের সবখানে থােকা থােকা শিউলি। পাপড়িগুলাে প্রস্ফুটিত হয়েছিল রাতে, ভাের হতে হতে ঝরে পড়েছে সাজদার সুখ নিয়ে। সবুজ ঘাসের বিছানায় শিউলি ঘুমিয়ে আছে পরম নির্ভরতায়। দুধসাদা পাপড়ির ওপর হীরের কুচির মতাে চকচক করছে কয়েক ফোঁটা শিশির। সকালের সােনারােদ শিউলির বৃন্তে জাফরানি রংটাকে করেছে আরও মােহময়। রােদের সাথে শিউলির নিবিড় আলাপন ভেঙে গেল মক্তবফেরত শিশুদের হাতে। শিশিরভেজা ঘাসে বসে মালা গাঁথছে তারা। দূর থেকে দেখি আর নিজের শৈশবটা বিম্বিত হতে দেখি ওদের চোখেমুখে। দিঘির মাঝখানে কচুরি ফুলেরা জড়াে হয়ে একটা দ্বীপ বানিয়েছে যেন। কচুরিপানাকে যতটা অপছন্দ করি, ততটাই পছন্দ করি কচুরিপানার ফুল। নদীতীরে কাশফুল ঘন হতে শুরু করেছে। বাতাসের দোলায় কাশফুল দোলে। কাশফুলের দোলায় আমার হৃদয় দোলে। সন্ধ্যা হলেই ছাতিমগাছের নিচে যেতে খেলার সাথিরা ভয় পেত। কে যেন তাদের বলেছিল, এই গাছে ভূত থাকে। ওই দিকে দিনরাত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সবক দেওয়া সাদা চামড়ার লােকেরাও একে নাম দিয়েছে ‘ডেভিল ট্রি’। অথচ সন্ধ্যা হলেই কী দারুণ ঘ্রাণ ছড়াতে থাকে ছাতিম ফুল! একটু রাত হলে ঘ্রাণ হয়ে ওঠে আরও মাদকতাময়। ছাতিমের ঘন পত্রপল্লব-জুড়ে নৈসর্গিক শিল্প সৌন্দর্যের তশতরি সাজিয়ে বসে, যখন আলাে-আঁধিয়ায় এই ফুলে সাদার ওপর সবুজ রং খেলা করে। নবিজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রিয় দুটি রং এই ফুলটাতে মিলেমিশে সৌরভ ছড়ায়, ছাতিম ফুলকে তাই আমি ভালােবাসি।। ঘাসের ফরাশে ঘনীভূত শিউলি, দিঘির বুকে ফোটা কচুরিফুল, নদীর কোলে দোল খাওয়া কাশফুল আর রাতের শিয়রে জেগে থাকা ছাতিমের ঘ্রাণ জানিয়ে দেয় শরৎ এসেছে।


শরতের রূপবিভায় সবচেয়ে সুন্দর অনুষঙ্গটা শরতের ঝকঝকে নীলাকাশ। ভাদ্রআশ্বিনের সতেজ প্রকৃতি আকাশকে যতটা স্বচ্ছদর্পণে দেখে, অন্য ঋতুতে একটানা এত সময় সে অবকাশ মেলে না। পুরাে বর্ষা-জুড়ে আকাশ থাকে কালাে মেঘের দখলে। সেই মেঘের ফাঁক দিয়ে আকাশের নীল দেখা ভার। বর্ষা শেষ হতে-না-হতেই শরতের। আকাশটা হয়ে ওঠে স্ফটিকের মতাে স্বচ্ছ। ঠিক যেন ফ্রেশরুমের আয়না। গােসলের সময় আয়নার গায়ে বাষ্প জমে, কিছুই দেখা যায় না। গােসল সারার পর ধীরে ধীরে সেই বাষ্প সরে যায়, আয়নাটা পরিষ্কার দেখাতে শুরু করে। বর্ষায় পুরাে প্রকৃতি সারা দিনমান গােসল করে, সে জন্যেই কি আকাশ সব সময় অস্বচ্ছ থাকে? রাতের বেলা আকাশটা আরও বেশি নান্দনিক হয়ে ওঠে। দূর থেকে তারাগুলােকে দেখে মনে হয়, উঠোনের শিউলিগুলাে কেউ আকাশের গায়ে ঝুলিয়ে দিয়েছে। রাতভর তারা আর শিউলিতে গল্প হয়। তাদের গল্পের মাঝে আমরাও বসাতাম গল্পের আসর। ঝিকিমিকি তারার ভিড়ে চাঁদটাকে মনে হয় কোনাে সভার মধ্যমণি। শৈশবে ক্যাসেট প্লেয়ারে সমবেত নাত শুনতাম : ‘লক্ষ তারার মাঝে চাঁদটি যেমন, সব নবিদের মাঝে নবিজি তেমন। সম্মান ও মর্যাদার দিক থেকে আমাদের নবিজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য নবিদের মাঝে চাঁদের মতাে, তেমনি সৌন্দর্যের দিক থেকেও তিনি ছিলেন। চাঁদের সাথে তুলনীয়। সাহাবি জাবির ইবনু সামুরা (রা.) বলছেন, “আমি পূর্ণিমার রাতে একবার চাঁদের দিকে তাকাচ্ছিলাম, আরেকবার নবিজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দিকে। আমার মনে হলাে, চাঁদের চেয়ে নবিজিই বেশি সুন্দর। আহা, যদি একবার দেখতাম সেই চাঁদমুখ! কী সৌভাগ্যবান ছিলেন তাঁরা! নবিজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে বসে, নবিজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পাশে থেকে পূর্ণিমারাত কাটত তাদের। আমরা পৃথিবীতে সেই সৌভাগ্য পাইনি। আল্লাহ, আখিরাতে সেই সৌভাগ্য থেকে আমাদের তুমি বঞ্চিত কোরাে না! এমনই এক পূর্ণিমারাতে নবিজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর প্রিয় সাহাবিদের বলছেন : “তােমরা কিয়ামতের দিন আল্লাহকে দেখবে। এই-যে পূর্ণিমার রাতে পূর্ণচাঁদটাকে যেমন স্পষ্ট দেখছ, তেমনই স্পষ্টভাবে। [বুখারি : ৫৫৪] জান্নাতবাসীদের জন্যে সবচেয়ে বড় পুরস্কার—তারা আল্লাহকে দেখবে। আল্লাহ, সেই পুরস্কারের উপযুক্ত না হবার আগে পৃথিবী থেকে আমাদের ডেকে নিয়াে না।


এরকম ‘চান্নিপসর রাতে আমরা যখন কোথাও হেঁটে যেতাম, মনে হতাে চাঁদটাও আমার সাথে হেঁটে যাচ্ছে। পুকুরের পাড় দিয়ে হেঁটে গেলে মনে হতাে, চাঁদটা উবু হয়ে পুকুরজলে আয়না দেখছে। ঘাটে কেউ ওযু করতে বসলে পুকুরে ঢেউ তৈরি হতাে৷ সেই ঢেউয়ের সাথে চাঁদের প্রতিবিম্ব অদ্ভুত সুন্দর নৃত্য করত। নগরজীবনে যে মানুষেরা শিল্পের পেছনে ছােটে, নান্দনিকতার উৎস খুঁজে হয়রান হয়, তারা কি কখনও একাদশী রাতে পুকুরের ঢেউয়ে দুলতে থাকা চাঁদটাকে দেখেছে? এই তারা ঝলমলে রাতের দিকে তাকিয়ে আল্লামা ইকবাল লিখেছিলেন : “সিতারাে সে আগে জাহাঁ আওর ভি হ্যায়..’ (তারকার ওপারেও আরও জগৎ আছে!) মানে কী? তারকার আলাে দেখে ভেবাে না, সৌন্দর্যের শেষ এখানেই। মনে করাে না, আল্লাহর অপার সৃষ্টির সীমা এখানেই থেমে গেছে। আরও বড় জগৎ পড়ে আছে তােমার অগােচরে। ঝলমলে তারা আর ঝকঝকে চাঁদ দেখে তাদের প্রেমে পড়ে যেয়াে না, তাদের অতিক্রম করে তােমার অনুভূতি পৌঁছে যাক অদেখা জগতের পারে। একই কবিতায় ইকবাল বলছেন : “তু শাহি হ্যায় পারাওয়াজ হ্যায় তেরা কাম/তেরে সামনে আসমা অওর ভি হ্যায়।” অনুবাদ যদি করতে চাই :


“ছােটোখাটো কোনাে পাখি নও, তুমি আকাশের শাহবাজ | যত উঁচু আর যত দূরে পারাে, উড়াই তােমার কাজ। খােলাচোখে দেখা কাছের আকাশ নয় তাে তােমার রাজ আকাশের পরে আরও যে আকাশ ডাকছে তােমাকে আজ!” সত্যিই তাে! একজন মুসলিম ছােটো স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে না। তাওয়াক্কুল এর প্রণােদনা, প্রত্যয়ের প্রবর্তনা আর অসীম সাহসের উদ্দীপনা তাকে পরিণত করে স্বপ্নবাজ কর্মনায়কে। তার হৃদয়ের যাত্রাপথ এই ছােটো পৃথিবীতে শেষ হয় না, এই পথ একেবেঁকে পৌঁছে যেতে চায় সপ্ত আসমানের মঞ্জিল। ছােটো কোনাে ডালে বাসা | বেঁধে জীবন পার করে দেওয়ার জন্য জন্ম নেয়নি আকাশের শাহবাজ, সীমিত দিগন্তে। ডানা ঝাপটানাের জন্যও আসেনি সে; তার জন্মই হয়েছে অদেখা দিগন্ত জয় করার জন্য, আত্মপ্রত্যয়ী পাখায় ভর করে দৃষ্টিসীমার ওপারে ওড়ে যাবার জন্য। মহাজগতের মহাসঙ্গীত শােনার এই নেশা শােণিতে বয়ে চলে বলেই একজন মুসলিম ক্ষয়িষ্ণু-সুরের সুরায় বুদ হয়ে থাকে না। তার আবেগ-অনুভূতি বৈষয়িক চাকচিক্যের ক্ষুদ্র গণ্ডিতে আটকে না থেকে স্বর্ণঈগলের ডানা নিয়ে ওড়ে যায় ফিরদাউসের স্বর্ণদ্বার পর্যন্ত। এই অপার্থিব স্বপ্নের কথাই ইকবাল বলতেন।


লক্ষ্য উঁচুতে রাখার এই প্রেরণা, স্বপ্নকে বড় করার এই প্রেষণা সাইয়িদুনা মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছ থেকে পাই সবচেয়ে বেশি। প্রিয় উম্মতকে তিনি শেখাচ্ছেন কীভাবে বড় স্বপ্ন দেখতে হয় :


“তােমরা যখন আল্লাহর কাছে চাইবে, তখন জান্নাতুল ফিরদাউসই চাইবে। এটা অন্য জান্নাতগুলাের মধ্যবর্তী এবং এটা সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত জান্নাত। আমি এর ওপরে আল্লাহর আরশ দেখেছি।”[বুখারি : ২৭৯০]


আল্লাহর সৃষ্ট জান্নাতগুলাের মধ্যে ফিরদাউস সবচেয়ে সুরম্য ও মনােহর। এটার অবস্থানও বাকি জান্নাতগুলাের ঊর্ধ্বে। আরশের সবচেয়ে কাছে ফিরদাউসের অবস্থান। নবিজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেন-বা বলছেন, জান্নাতের স্বপ্নচারী মানুষেরা, বড় স্বপ্ন দেখাে! জান্নাতেই যখন যেতে চাও, সেরা জান্নাতটাই আল্লাহর কাছ থেকে চেয়ে নাও। হাদীসপাঠের অনুভূতিটাই ছন্দে বাঁধার চেষ্টা করেছিলাম একদা :


বুকের খাতায় খুব যতনে


একটা স্বপন আঁকি ফিরদাউসের ফুল বাগানে


আমি হব পাখি।


স্বপ্ন যত বড় হয়, স্বপ্নপূরণের দায়টাও তত বড় হয়। এ কথাটাও স্মরণ করিয়ে দিতে ভােলেননি আমাদের রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আরেক হাদীসে বলে দিচ্ছেন : “অপ্রিয় কষ্টকর কাজ দিয়ে জান্নাত বেষ্টিত, আর জাহান্নাম বেষ্টিত লােভনীয় প্রবৃত্তি দিয়ে।”[মুসলিম : ৭৩০৮] এই হাদীস কী বলতে চায়? বলতে চায়, তােমার স্বপ্নের মঞ্জিল অনেক দূরে। যদি অলস ও আরামপ্রিয় হও, অষ্টপ্রহর ভােগে মত্ত থাকো, মঞ্জিলে পৌঁছার আগেই বেলা ফুরিয়ে যাবে। কামনার মিষ্টি স্রোতস্বিনীতে ভাসিয়ে নিজেকে খুব বুদ্ধিমান মনে কোরাে না, এই নদী শেষতক আগুনের সমুদ্রে গিয়ে মিশেছে।


পাহাড়ি ঢলে শিকড়চ্যুত হয়ে গাছের যে গুঁড়িটা নদীর সুশান্ত প্রবাহে নিজেকে সঁপে দিয়ে আনমনে ভেসে যাচ্ছে, সে হয়তাে জানে না, আরও কিছুদূর গিয়ে তাকে তরঙ্গবিক্ষুব্ধ সমুদ্রে পড়তে হবে, যেখানে উন্মাতাল ঊর্মি ও ঘূর্ণি আছড়াবে তাকে। শিকড়চ্যুত ভাসমান গুঁড়িটার সাথে আমার মিল আছে। আপনার? শরতের নদী শরতের আকাশের মতােই উপভােগ্য। গ্রীষ্মের মতাে ঝড়ের শঙ্কা নেই, বর্ষার মতাে আকস্মিক ঢলের ভয় নেই, হেমন্ত ও শীতের মতাে নিরস-বিবস শুষ্কতার দেখাও নেই। শরতের কোনাে এক বিকেলে নদীর মধ্যপন্থী স্রোতের প্রবাহ আর জলহারা মেঘের দখলে থাকা স্বচ্ছ আকাশ নদীভ্রমণের জন্য একেবারে জুতসই। খেয়াঘাটের মাঝিকে বলে রেখেছি, আজ বিকেলে নদী ঘুরে দেখব। কতদিন হয়ে গেল, পালতােলা নৌকায় চড়ি না! পানকৌড়ির সাথে পাল্লা দিয়ে দুরন্ত বালকের সাঁতার, কাশবনে লুকোচুরি খেলায় মত্ত উজ্জ্বল শিশুদের কোলাহল দেখতে চাই শান্ত নদীর বুকে ভাসতে ভাসতে। মাঝি এসে ভিড়েছে আমাদের ঘাটে। আল্লাহর নাম নিয়ে উঠে পড়লাম। একজন আনকোরা প্রকৃতিপ্রেমীকে পেয়ে শরতের নদী খুশিতে মাতােয়ারা, ঢেউভাঙা গান হয়তাে সেই খুশিরই বহিঃপ্রকাশ। গলুইয়ে বসে বৈঠা চালাতে থাকা মাঝি কিছুক্ষণ পরপর আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। এই পল্লীতে এর আগে আমাকে হয়তাে দেখেনি কখনও। পুরােদস্তুর কেতাদুরস্ত শহুরে হয়ে গিয়েছি তাে, ফুল-পাখি আর নদীর সাথে ভাব জমানাের সুযােগ আর মিলে না। কালেভদ্রে যখন আসি, চুপচাপ সবুজের সাথেই অবুঝ গল্প পাতি। অচেনা মনে হবার পেছনে এও একটা কারণ। হাত বাড়িয়ে নদীর ঠান্ডা জল ছুঁতে চাই৷ চলন্ত নৌকা থেকে পানিতে ডুবিয়ে রাখা হাত একটা রেখা তৈরি করতে চায়, অঙ্কন ফুটে ওঠার আগেই রেখাটা মুছে যায়। ধ্রুপদী উর্দুকবিতার প্রাণপুরুষ মীর তকী মীর-এর ব্যথিত হৃদয়টা মনে পড়ে :


“নকশ নেহি পানি মে উভরতা য়ে তাে কোয়ি আচমভা হ্যায় সুরত খুব উসকি হ্যায় ফিরতি আকসর চশম তর হ্যায় আব” [মীর তকী মীর : গজল থেকে, পৃ. ৮০ জাভেদ হুসেন-কৃত সরল অনুবাদ অবলম্বনে কাব্যানুবাদ করা হয়েছে।]


“শুনেছি, পানিতে নকশা ফোটে না, কিন্তু অবাক কাণ্ড, এ কী!


জলভেজা এই দুচোখে আমার তার ছবি কেন ভাসতে দেখি?” কবিরা এই নদীকে তুলনা করেন নারীর সাথে। কবি আল মাহমুদ এর প্রিয়তমা স্ত্রী নদীতে নেমেছেন, আল মাহমুদ লিখলেন : ‘নদীর ভিতরে নদী। নদী ও নারীর মিলটা


ঠিক কোথায়, রবীন্দ্রনাথ খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন। পর্যবেক্ষণটাও দারুণ : ‘(উভয়ের) একটা বেশ সহজ গতি-ছন্দ-তরঙ্গ, দুঃখতাপে অল্প অল্প শুকিয়ে যেতে পারে, কিন্তু আঘাতে একেবারে জন্মের মতাে দুখানা হয়ে ভেঙে যায় না।’ মিল খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন কবি জসীমউদ্দীনও। তাঁর উপলব্ধি : ‘প্রেমের তটিনী বড় বাঁকা সখি, বাঁকা এর পথ-ঘাট/এ দেশেতে সখি, জলের ডিঙা ফেরে ডাঙ্গার বাঁট। [‘ভগ্ন প্রেম’ কবিতা থেকে] আবু জাফর শামসুদ্দীন এর চিত্রকল্প আরেকটু সহজ, কিন্তু মজবুত : ‘এখানে রমণীগুলাে নদীর মতাে/ নদীও নারীর মতাে কথা কয়। রমণী নদীর মতাে কীভাবে হয়? তার একটা উত্তর না হয় রবীন্দ্রনাথ বা জসীম এর কাছে পেলাম। কিন্তু নদী কী কথা কয়? নারীর মতাে কথাটা ঠিক কেমন? এই উত্তর খুঁজতে গিয়ে মনে পড়ে আরেক নারীকে। তিনি কবি নাযিক মালাইকা। আধুনিক আরবি কবিতায় নানা বাঁক পরিবর্তনের ধারায় নাযিক বিশেষভাবে স্মরণীয়। আরব দুনিয়ায় মুক্তছন্দকে জনপ্রিয় করার সিংহভাগ কৃতিত্ব তাঁরই। ফোরাতের তীরে জন্ম তাঁর। চিন্তা ও কল্পনার গভীরতাও ফোরাতের মতােই। নদীর বুকে ভাসতে ভাসতে মনে পড়ে তাঁর জাদুকরী কবিতার ক’টা লাইন :


কুলুকুলু রবে ঢেউ তুলে তবে কী বলতে চায় নদী? রহস্যের ওই গল্প না হয় না বলাই যাক থেকে


পদ্মফুলের রহস্য সব জানা হয়ে যায় যদি অর্থ থাকে না মিহিন ঘ্রাণের, মােহন লাগে না একে।


সত্যিই তাে! কিছু জিনিস রহস্যাবৃত থেকে যাওয়াই সুন্দর, কিছু বিষয় অজানা থেকে যাবার মধ্যেই আনন্দ, কিছু ভালােবাসা দূরত্বেই প্রবল শক্তিশালী। যে নাশিদ আজ খুব ভালাে লেগেছে, কয়েকদিন অনবরত শােনার পর সেটাতে বিতৃষ্ণা পেয়ে বসে। অথচ জারুল গাছে ভাটশালিকের গান শুনি আজ কত বছর ধরে, একবারও কিন্তু বিরক্তি আসেনি। কী অদ্ভুত তন্ময়তার সংযােগে শ্যামা পাখির ডাক শুনতে কান পেতে রাখি! ঝিঝি পােকার একটানা শব্দ আজও কত আগ্রহ নিয়ে শুনি! মাঝে মাঝে মনে হয়, এই পাখিদের গানের ভাষা যদি বুঝতাম, ঝিঝিদের ডাকে লুকায়িত অর্থ যদি উন্মােচিত হয়ে যেত আমার সামনে, হয়তাে সেই প্রিয় গানটার মতােই একটা সময় বিতৃষ্ণ হতাম তাদের প্রতি। এরা রহস্যাবৃত থেকেই সুন্দর, অজানা রয়ে গেছে বলেই এরা মনােহর। নাযিক মালাইকার মতাে আমিও তাই নদীর ভাষা বুঝতে চাই না। একবার বুঝে ফেললে বারবার বােঝাপড়ার আনন্দ কোথায় আর পাব? ফোরাতের মতাে বেহেশতী নদী নাযিক মালাইকা কাছ থেকে দেখেছেন। ‘বেহেশতী নদী’ কথাটা আমার নয়, নবিজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই নদীকে এমনই বিশেষণে বিশেষায়িত করেছিলেন। বেহেশতের নদীগুলাে যে নজরকাড়া সৌন্দর্য, নৈসর্গিক প্রাচুর্য আর অব্যাখ্যেয় নান্দনিকতায় ভরপুর, ফোরাত নদীতে তার কিছুটা প্রকাশ পায়, এজন্যে নবিজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন প্রশংসা করেছেন। এমন নদীর হাওয়ায় নাযিক তাঁর মন-প্রাণ জুড়িয়েছেন, তবু তাকে রহস্যাবৃত রেখেই আনন্দ খুঁজেছেন। নাযিকের বিপরীত অনুভূতি খুঁজে পাই ওয়ার্ডসওয়ার্থ এর কাছে। আমি তাকে আদর করে ইংরেজির জীবনানন্দ’ বলে ডাকি। ইয়েরাে নদী ছিল তাঁর খুব প্রিয়। দজলাফোরাতের মতাে অতটা সুন্দর না হলেও ইয়েরাে তার নিজের মতাে চিত্তাকর্ষক। ওয়ার্ডসওয়ার্থ এই নদীর কথা শুনেছেন, নদীর রূপবিভা নিয়ে মানুষের উচ্ছ্বাস দেখেছেন, নদীর অপরূপ সৌন্দর্যের বর্ণনা পড়েছেন, লিখেছেন তাঁর বিখ্যাত কবিতা Yarrow Unvisited| এই কবিতায় তিনি নদীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ, নদীর প্রেমে কাতর। একদিন সত্যি সত্যি ইয়েরাে নদী দেখার স্বপ্ন পূরণ হলাে। এতদিন শুনে আসা বর্ণনার সাথে মিলিয়ে দেখলেন খুঁটে খুঁটে। হায়, তার কল্পনার সাথে কত অমিল! ইয়েরাে তাকে মুগ্ধ করতে পারল না। আরেকটা কবিতা লিখলেন : Yarrow Visited| হতাশার কথা


আবু হুরায়রা রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : “জান্নাত থেকে চারটি নদী প্রবাহিত হয়েছে—ফোরাত, নীল, সাইহান ও জাইহান।” ইমাম মানাওয়ি এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, জান্নাতের নদী বলে অভিহিত করার কারণ হলাে, এই নদীগুলাের পানিতে অনন্য স্বাদ ও পরিপাকগুণ আছে। নদীগুলােতে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বরকতে ধন্য, নদীগুলােতে আল্লাহর নবিগণ নেমেছেন, সেখান থেকে পানি পান করেছেন, ফলে নদীগুলাের সম্মানমর্যাদা বেড়েছে। অসাধারণ গুণ ও উচ্চকিত মর্যাদার কারণে মনে হয় এরা যেন জান্নাতের নদী। [ফাইদুল কাদীর : ৪/১১৮]

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.