আয়েশার সঙ্গে রাসুল মুহাম্মদের (সা.) দাম্পত্যজীবন কি অসুখী ছিলো? একজন কেবলই কিশোরী, আরেকজন পঞ্চাশোর্ধ্ব প্রবল ব্যক্তিত্ববান মানুষ; কেমন ছিলো অসম বয়সী এ দুজনের প্রেমময় সংসারের হালচাল? ঝগড়া হতো? খুনসুটি? মান-অভিমানে কান্না হতো?
খাদিজা (রা.) কেন প্রৌঢ়ত্বের দ্বারপ্রান্তে এসে হাত বাড়িয়ে আগলে নিলেন যুবক মুহাম্মদের হাত? মুহাম্মদ (সা.) যেদিন নবি হলেন, ভয়ে কাঁপছিলেন তিনি; খাদিজা তাঁকে বুকে জড়িয়ে কেন বলেছিলেন, ‘ভয় নেই আপনার’?কেন সুদূর ইথিওপিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান নাজ্জাশির রাজপ্রাসাদে আয়োজন করা হলো মুহাম্মদ (সা.) এবং কুরাইশকন্যা উম্মে হাবিবার বিয়ে? কেন ইহুদি রাজকুমারী সাফিয়্যাকে যুদ্ধদাসী থেকে বরণ করে নিলেন উম্মুল মুমিনিন হিসেবে?
রাসুল মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর ১১ জন স্ত্রীর দাম্পত্যজীবন ও প্রেমের অসংখ্য গল্পভাষ্য নিয়ে রচিত ইতিহাস-অনুসন্ধানী লেখক সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর-এর অনবদ্য উপাখ্যানগ্রন্থ ‘প্রিয়তমা’। একদিকে নিরেট নির্মোহ ইতিহাসের বর্ণিল আয়োজন, আরেক দিকে উম্মুল মুমিনিনদের জীবনের অনালোচিত অধ্যায়ের নতুন আবিস্কার। নতুন ভাষা ও প্রাঞ্জল গদ্যে রাসুলের দাম্পত্যজীবনের পূর্ণ ছায়াছবি উঠে এসেছে এ গ্রন্থে।
আয়েশার সঙ্গে রাসুল মুহাম্মদের (সা.) দাম্পত্যজীবন কি অসুখী ছিলো? একজন কেবলই কিশোরী, আরেকজন পঞ্চাশোর্ধ্ব প্রবল ব্যক্তিত্ববান মানুষ; কেমন ছিলো অসম বয়সী এ দুজনের প্রেমময় সংসারের হালচাল? ঝগড়া হতো? খুনসুটি? মান-অভিমানে কান্না হতো?
খাদিজা (রা.) কেন প্রৌঢ়ত্বের দ্বারপ্রান্তে এসে হাত বাড়িয়ে আগলে নিলেন যুবক মুহাম্মদের হাত? মুহাম্মদ (সা.) যেদিন নবি হলেন, ভয়ে কাঁপছিলেন তিনি; খাদিজা তাঁকে বুকে জড়িয়ে কেন বলেছিলেন, ‘ভয় নেই আপনার’?
কেন সুদূর ইথিওপিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান নাজ্জাশির রাজপ্রাসাদে আয়োজন করা হলো মুহাম্মদ (সা.) এবং কুরাইশকন্যা উম্মে হাবিবার বিয়ে? কেন ইহুদি রাজকুমারী সাফিয়্যাকে যুদ্ধদাসী থেকে বরণ করে নিলেন উম্মুল মুমিনিন হিসেবে?
রাসুল মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর ১১ জন স্ত্রীর দাম্পত্যজীবন ও প্রেমের অসংখ্য গল্পভাষ্য নিয়ে রচিত ইতিহাস-অনুসন্ধানী লেখক সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর-এর অনবদ্য উপাখ্যানগ্রন্থ ‘প্রিয়তমা’। একদিকে নিরেট নির্মোহ ইতিহাসের বর্ণিল আয়োজন, আরেক দিকে উম্মুল মুমিনিনদের জীবনের অনালোচিত অধ্যায়ের নতুন আবিস্কার। নতুন ভাষা ও প্রাঞ্জল গদ্যে রাসুলের দাম্পত্যজীবনের পূর্ণ ছায়াছবি উঠে এসেছে এ গ্রন্থে।
উম্মুল মুমিনিন হাফসা বিনতে উমর [রা.] অধ্যায়
এক রাসুল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম তখনাে নবুওয়াতপ্রাপ্ত হননি। মক্কায় একজন ভালাে মানুষ হিসেবে বসবাস করছেন। মক্কার লােকজন তাঁর সত্যবাদিতা এবং সচ্চরিত্রের জন্য তাকে আল-আমিন বলে ডাকে। তিনি স্ত্রী খাদিজা এবং সন্তানদের নিয়ে নিরুপদ্রব জীবনযাপন করছিলেন সে সময়টাতে।
এ সময় মক্কার তীর্থস্থান কাবাঘর পুনর্নির্মাণ নিয়ে স্থানীয় গােত্রপতিদের মধ্যে একটা বিবাদ বেশ মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। সংস্কার শেষে পবিত্র পাথর কাবাঘরে স্থাপন করবে কে, এ নিয়ে গােত্রপতিদের কোন্দল তুঙ্গে। কেউ কোনাে সুরাহা দিতে পারছিল না। অবশেষে তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হলাে-উপস্থিত ব্যক্তিরা ব্যতীত আগামীকাল সকালে যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম কাবাঘরে আসবে, তার সদ্ধান্তই মেনে নেওয়া হবে। | দেখা গেল, পরদিন সকালে সবার আগে কাবাঘরে এসেছেন তাদের সকলের প্রিয় আল-আমিন, মুহাম্মদ। সবাই তার শরণাপন্ন হলে তিনি পরামর্শ দেন-একটি বড় চাদর এনে সেটার মাঝখানে পবিত্র পাথর বসানাে হােক। চাদরটির চারপাশে প্রতি গােত্রের একজন করে গােত্রপতি ধরে পাথরকে কাবার ভেতরে নিয়ে যাওয়া হােক। সকলেই তার এমন অভিনব সমাধানে যারপরনাই আনন্দিত হলাে। পবিত্র পাথরকে চাদরের ওপর বসিয়ে সকলেই সেটাকে ধরে কবার ভেতরে নিয়ে গেল এবং আল-আমিন সেটা নির্দিষ্ট স্থানে বসিয়ে দিলেন। মুহাম্মদের এমন বুদ্ধিমত্তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠল সবাই।
বদরের যুদ্ধের পরপর অসুস্থ অবস্থায় রাসুলের আদরের মেয়ে রােকাইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহা ইন্তেকাল করেন। তিনি উসমান ইবনে আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহুর সহধর্মিণী ছিলেন। চমৎকার একটি জুটি ছিল। দুজনই ছিলেন লজ্জার ভূষণে আবৃত। একসঙ্গে সর্বপ্রথম হিজরত করেন ইথিওপিয়ায়, আবার একই সঙ্গে ইথিওপিয়া থেকে হিজরত করে আসেন মদিনায়। ভালােবাসায় টইটম্বুর ছিল তাদের সংসার। কিন্তু আল্লাহর ইশারায় এ জুটির একটি পাখি বেহেশতের সবুজ পাখিদের ভিড়ে মিশে গেলেন। বদরের যুদ্ধের পরপরই রােকাইয়া আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান।
উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এলেন উসমানের কাছে। সদ্য গত হওয়া স্ত্রীর বেদনায় মুষড়ে পড়া উসমানের যাতনা কিছুটা হলেও উপশম করার নিমিত্তে তিনি তাঁর মেয়ে হাফসার নাম প্রস্তাব করলেন বিয়ের জন্য। উসমান হঁ্যা বা না কোনাে উত্তর না দিয়ে জানালেন, এখন তিনি বিয়ে নিয়ে ভাবছেন না। যদি মনস্থির করেন, তখন এ বিষয়ে ভাববেন।।
উসমানের পক্ষ থেকে একপ্রকার না-সূচক উত্তর পেলেন উমর ফারুক। তিনি মনঃক্ষুন্ন হয়ে প্রিয় বন্ধু আবু বকরের কাছে এলেন। তাঁকেও একই প্রস্তাব দিলেন। তিনি হঁ্যা বা না কোনাে উত্তর না দিয়ে এ বিষয়ে বরং চুপ থাকলেন। আবু বকরের এমন আচরণে উমরের মনােবেদনা আরও তীব্র হলাে। তিনি নিজের মনঃকষ্টের কথা কিছুটা হালকা করতে রাসুলের কাছে এলেন।
| রাসুলের কাছে এসে উসমান ও আবু বকর তার সঙ্গে কেমন বিমাতাসুলভ আচরণ করেছেন, সে ব্যাপারে অনুযােগ করলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম হয়তাে এমন প্রস্তাবের জন্যই প্রতীক্ষিত ছিলেন।
রাসুলের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। তাঁর সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক হােক-এমন আকাঙ্ক্ষা অনেকেই করতেন। কিন্তু ঐশী ইশারা ছাড়া রাসুল কারও সঙ্গে আত্মীয়তা করার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাতেন না। | উমর ইবনে খাত্তাব রাসুলের অন্যতম প্রিয় বন্ধু এবং অত্যন্ত উঁচু মাপের সাহাবি। যদিও আবু বকরের সঙ্গে তার তুলনা চলে না, কিন্তু আবু বকরের পরে যদি কারও নাম উচ্চারিত হয়, তবে তিনি উমর। সে হিসেবে উমরও মনে মনে কামনা করতেন তার সঙ্গে রাসুলের একটা আত্মীয়তার বন্ধন হােক। যেমন আবু বকর-তনয়া আয়েশাকে নিজের বধূ করে তিনি তাকে সম্মানিত করেছেন। কিন্তু উমর এমন কথা কখনাে সরাসরি রাসুলের সামনে বলতে পারেন না, যদি না রাসুল নিজ থেকে কখনাে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
লেখক : সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর
প্রকাশনী : নবপ্রকাশ
বিষয় : সীরাতে রাসূল (সা.)