গুনাহ কাকে বলে?
‘গুনাহ’ শব্দটি বাংলা ভাষায় বহুল প্রচলিত হলেও এটি মূলত ফার্সি শব্দ। গুনাহ বুঝাতে বাংলায় আরও একটি বহুল প্রচলিত শব্দ হচ্ছে পাপ। বাংলা অভিধানে এর অর্থ লেখা হয়েছে অন্যায়, কলুষ, দুষ্কৃতি ইত্যাদি। আরবীতে গুনাহ বা পাপ বুঝানোর জন্য অনেকগুলো পরিভাষা ব্যবহৃত হয়। যেমন, আল ইস্ম, আল খাত্বা ও আল খাত্বীআহ্ , আল মা‘সিয়াহ্ (المعصيةُ), আল জুর্ম , আয্ যান্ব ইত্যাদি।
এ সকল পরিভাষার মাঝে কিছু সূক্ষ্ম পার্থক্য থাকলেও মূলত যা বুঝায় তা হলো, আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর আদেশ পালন না করা বা তাঁদের বিরুদ্ধাচরণ করা ও তাঁদের নিষেধকৃত কাজ করা, তা প্রকাশ্যেই হোক বা গোপনে হোক।
কাবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকা
গুনাহ মাফের অন্যতম উপায় হলো কাবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকা। কাবীরা বা বড় গুনাহগুলো থেকে বেঁচে থাকলে বান্দার অন্যান্য ছোট ছোট গুনাহগুলো আল্লাহ তা‘আলা মাফ করে দিবেন এবং সম্মানীত স্থানে অর্থাৎ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
মহান আল্লাহ বলেন :
‘‘তোমরা যদি নিষেধকৃত কবীরা গুনাহগুলো বা বড় পাপসমূহ পরিহার করো তাহলে আমরা তোমাদের ছোট পাপগুলোকে মোচন করে দেব এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে (জান্নাতে) প্রবেশ করাবো।’’[সূরা আন্ নিসা ০৪ : ৩১]
অন্য আয়াতে তিনি বলেন,
‘‘যারা ছোটখাট দোষ-ত্রুটি ছাড়া বড় বড় পাপ ও অশ্লীল কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকে, নিশ্চয় তোমার রব ক্ষমার ব্যাপারে উদার, তিনি তোমাদের ব্যাপারে সম্যক অবগত।’’[সূরা আন্ নাজ্ম ৫৩ : ৩২]
উপরি-উল্লিখিত আয়াত দু’টির প্রথমটির দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, কাবীরা গুনাহ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারলে অর্থাৎ কাবীরা গুনাহ না করলে আল্লাহ সগীরা গুনাহকারীকে এমনিতেই মাফ করে জান্নাত দান করবেন। আর দ্বিতীয় আয়াতটিও প্রথম আয়াতের শিক্ষার অনুকূলে বক্তব্য উপস্থাপন করেছে। মোটকথা সকল ধরনের কাবীরা গুনাহ থেকে দূরে থাকা সগীরা গুনাহ মাফের অন্যতম উপায়।
তাওবাহ্ করা – (ক) তাওবাহ্ পরিচিতি
‘তাওবাহ্’ আরবী শব্দ। এর অর্থ ফিরে আসা, প্রত্যাবর্তন করা। মানুষ শয়তানের কুমন্ত্রণায় আল্লাহর পথ থেকে বিপথে চলে গেলে তার জন্য আবার আল্লাহর পথে ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে। সেই সুযোগের নাম-ই ‘তাওবাহ্’। সাউদী আরবের বিখ্যাত ‘আলিম শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমীন (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে তাওবাহ্ হলো,
‘‘আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্যতা থেকে তাঁর আনুগত্যে ফিরে আসা।’’[মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমীন, শারহু রিয়াদিস সালিহীন, তাওবাহ্ অনুচ্ছেদের ব্যাখার প্রাথমিক আলোচনা।] সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ তাওবাহ্ হলো কুফর ও শির্ক থেকে তাওবাহ্ করে ইসলামের ছায়াতলে ফিরে আসা। তারপর গুরুত্বপূর্ণ তাওবাহ্ হলো কাবীরা গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করা। আর সর্বশেষ তাওবাহ্ হলো সগীরা গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করা।