Notification texts go here Contact Us Buy Now!

Leadership - নেতৃত্ব প্রদান - সূলাইমান বিন আওয়াদ ক্বিয়ান pdf download

Please wait 0 seconds...
Scroll Down and click on Go to Link for destination
Congrats! Link is Generated




প্রথম অধ্যায়

মসজিদের ঝাড়ুদার এক বৃদ্ধা নারী 

আবু হুরায়রা [রা:] হতে বর্ণিত। একজন গাঢ় কৃষ্ণকায় মহিলা মসজিদ ঝাড় দিতেন। এজন্য আল্লাহর রসূল এলাকায় তাকে পছন্দ করতেন ও তার খোজ খবর নিতেন। কেউ একজন এসে রসূল [সা.]-কে বললেন, ঐ মহিলা মারা গেছেন। তিনি প্রশ্ন করলেন তােমরা কেন আমাকে জানাওনি? এ প্রশ্নের মাধ্যমে এমন একটি অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন যে, তারা হয়ত উক্ত মহিলার ঝাড় দেয়ার কাজকে তুচ্ছ ভাবত। তিনি বললেন : আমাকে তার কবরে নিয়ে চল। তখন তারা তাকে তার কবরের কাছে নিয়ে গেলেন। তিনি তার জন্য দুয়া করলেন। এরপর জানালেন, এ কবরস্থানের অনেক কবরবাসীর কবর সম্পূর্ণ অন্ধকারে (আযাবে) নিমজ্জিত ছিল। মহান আল্লাহ রব্বল আলামীন তাদের জন্য আমার দুয়ার মাধ্যমে স্বীয় রহমত বর্ষণ করত: আলােকিত করেছেন। আবু সাঈদ দু বর্ণনা করেন যে, উক্ত মহিলা অতি কৃষ্ণকার ছিলেন। তিনি রাতে মারা যান আর রসূল [সা.] -কে সকালে তার মৃত্যুর খবর দেয়া । হয়েছিল। তিনি প্রশ্নকরে বলেন, “কেন আমাকে তােমরা তার মৃত্যুর খবর জানাওনি? তিনি তার সাহাবীদেরকে নিয়ে যান ও তার কবরের পার্শ্বে দাড়ান। তিনি আল্লাহু আকবার বলে অনেক্ষণ ধরে দু’য়া করেন। অন্যরা তার পিছে একইভাবে থাকেন তিনি দীর্ঘক্ষণ দুয়া করে ফিরে আসেন। ইবনে আব্বাস নিচ্ছে বলেন, রসূলুল্লাহ [সা.] বলেন: আমি ঐ মহিলাকে জান্নাতে মসজিদ হতে ময়লা ঝাড় দিতে দেখেছি। হাদীসের শিক্ষা রসূলুল্লাহ

আবু হুরায়রা [রা:] হতে বর্ণিত। একজন গাঢ় কৃষ্ণকায় মহিলা মসজিদ ঝাড় দিতেন। এজন্য আল্লাহর রসূল এলাকায় তাকে পছন্দ করতেন ও তার খোজ খবর নিতেন। কেউ একজন এসে রসূল [সা.]-কে বললেন, ঐ মহিলা মারা গেছেন। তিনি প্রশ্ন করলেন তােমরা কেন আমাকে জানাওনি? এ প্রশ্নের মাধ্যমে এমন একটি অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন যে, তারা হয়ত উক্ত মহিলার ঝাড় দেয়ার কাজকে তুচ্ছ ভাবত। তিনি বললেন : আমাকে তার কবরে নিয়ে চল। তখন তারা তাকে তার কবরের কাছে নিয়ে গেলেন। তিনি তার জন্য দুয়া করলেন। এরপর জানালেন, এ কবরস্থানের অনেক কবরবাসীর কবর সম্পূর্ণ অন্ধকারে (আযাবে) নিমজ্জিত ছিল। মহান আল্লাহ রব্বল আলামীন তাদের জন্য আমার দুয়ার মাধ্যমে স্বীয় রহমত বর্ষণ করত: আলােকিত করেছেন। আবু সাঈদ দু বর্ণনা করেন যে, উক্ত মহিলা অতি কৃষ্ণকার ছিলেন। তিনি রাতে মারা যান আর রসূল [সা.] -কে সকালে তার মৃত্যুর খবর দেয়া । হয়েছিল। তিনি প্রশ্নকরে বলেন, “কেন আমাকে তােমরা তার মৃত্যুর খবর জানাওনি? তিনি তার সাহাবীদেরকে নিয়ে যান ও তার কবরের পার্শ্বে দাড়ান। তিনি আল্লাহু আকবার বলে অনেক্ষণ ধরে দু’য়া করেন। অন্যরা তার পিছে একইভাবে থাকেন তিনি দীর্ঘক্ষণ দুয়া করে ফিরে আসেন। ইবনে আব্বাস নিচ্ছে বলেন, রসূলুল্লাহ [সা.] বলেন: আমি ঐ মহিলাকে জান্নাতে মসজিদ হতে ময়লা ঝাড় দিতে দেখেছি। হাদীসের শিক্ষা রসূলুল্লাহ এর গভীর মনোেযােগ এমনই একটি অতি সাধারণ ঝাড়দার মহিলার প্রতি ছিল, যাকে তিনি অত্যন্ত মূল্যায়ন করেন ও যথাযথ সম্মানে আসীন করেন। এর গভীর মনোেযােগ এমনই একটি অতি সাধারণ ঝাড়দার মহিলার প্রতি ছিল, যাকে তিনি অত্যন্ত মূল্যায়ন করেন ও যথাযথ সম্মানে আসীন করেন।

৪. মুসলিম : হাদীস-১৬৪৮ ৫, ইবনে মাজাহ, কবর জিয়ারত অধ্যায় হাদীস নং ১৫৩৪ ৬. মাজমা আল-জওয়াইদ ২/১৩, তাবারানী।

মানবতার মহান নেতা নবী মুহাম্মাদ [সা.] এ প্রকার একজন মহিলা যিনি । তার ঝাড় দেয়ার কাজ করতেন তাকে সর্বশেষ স্তরের স্থানে সমাসীন করলেন? তিনি কতটাই সচেতন ছিলেন যে ঐ মহিলার অনুপস্থিতিতে যিনি মসজিদ ঝাড় দিতেন তিনি তার সম্পর্কে প্রশ্ন করে বসলেন? কি মহানুভবতা তাকে তাঁর সাহাবীদেরকে অভিযোেগ করালেন যে তােমরা আমাকে না জানিয়ে কেন তাকে কবর দিলে? কি জিনিস বাধিত করেছে তাঁকে যাওয়ার জন্য তাও একাকী নয় বরং তাঁর সাহাবীগণসহ একটি দল এবং তার কবরের পার্শ্বে দাড়িয়ে তার নাজাতের জন্য, তার কাজের প্রতি অনুমােদন প্রকাশ করার জন্য দুয়া করতে কি অনুভূতি তাকে উৎসাহিত করেছে? নেতার পক্ষ হতে সাহাবীর এ দলটির অন্তরে কি মহানুভূতির প্রেরণা তিনি যুগিয়েছেন যেটি তার অবর্তমানে নেতৃত্বের চরিত্রের প্রশিক্ষণ কি প্রদান করা ছিল না? কেন এ মহিমান্বিত মহিলাকে জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করে আনন্দিত করাল? এটা কি মহানুভবতা প্রকাশের ছােটখাট স্তর? তিনি ছিলেন একজন মহিলা যিনি তার নিজেকে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন ও তার ঘরের খেদমতে নিজেকে নিয়ােজিত করেছিলেন, এটি তাকে মহান করে উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। তার চেহারাগত কদার্জতা ও বার্ধক্যজনিত বয়স থাকা সত্ত্বেও নিজেকে মসজিদের কাজে এমনভাবে আত্মনিয়োেগ করে রেখেছিলেন যেখানে মানুষের পক্ষ হতে কাজের স্বীকৃতি বা প্রশংসার প্রতি ভ্রুক্ষেপ ছিল না। মহান শিক্ষক ও পথ নির্দেশক রসূলুল্লাহ আল মসজিদের দিকে আসা-যাওয়া করতেন তখন এ পূণ্যবতী মহিলার একাগ্রচিত্রে অত্যন্ত প্রাণবন্তভাবে যে। মসজিদ ঝাড় দেয়ার কাজ করতেন তা তিনি দেখতেন। তিনি তার এ মহান ইবাদতের প্রতি খুবই সম্ভষ্ট হতেন ও আত্মতৃপ্তি পেতেন। বস্তুতঃ এটা এমনই একটি বিষয়, যার প্রতি খুব কম সংখ্যক মানুষই গভীরভাবে উপলব্ধি করে। আর পূর্ণাত্মা-মহিলা তার কাজ প্রতিনিয়ত মসজিদে আসাযাওয়ার মধ্য দিয়ে একান্ত ইবাদতের নিয়তেই করতেন। আল্লাহ রব্বল আলামীন জান্নাতের আটটি দরজা তার বান্দাদের কাজের স্তর ভিত্তিক স্বীকৃতি প্রদানের জন্য তৈরী করেছেন। একাগ্রতা ও ঐকান্তিকতা দিয়ে যা মাপা হবে। উক্ত মহিলা এমনই কাজ তিনি সম্পন্ন করতে পেরেছেন যার মাধ্যমে তার জন্য জান্নাতের সকল দরজা উন্মুক্ত হয়েছে ও নবীজী তাকে জান্নাতে মসজিদের ঝাড় দিতে দেখেছেন। সুতরাং তার সমাপ্ত ছিল অত্যন্ত চমৎকার। আর প্রতিটি মানুষ তার শেষ কর্ম দিয়েই আখিরাতের প্রতিফলের সম্মুখীন হবেন। ঐ মহিলা তার কাজ সুচারুরূপে সুসম্পন্ন করেছেন ও তার জীবনের শেষ সময় আল্লাহর মহান ঘর নবীর মসজিদ পরিষ্কারের কাজে অতিবাহিত করেন। এ কারণে মহান নেতা রসূলুল্লাহ [সা.] -এর পক্ষ হতে যথাযথ প্রতিদানও পেয়েছেন। আর তা হলাে তার জান্নাতে পদচারণ। আর ঐ মসজিদের মহান ইমামের পক্ষ হতে তার প্রতি তাঁর মসজিদ পরিচ্ছন্নতা কাজের পরম স্বীকৃতি ও প্রতিদান। আর তাহলে তিনি স্বয়ং ও তাঁর সাহাবীগণকে নিয়ে তার কবরের কাছে যেয়ে তার জন্য একান্তভাবে দীর্ঘক্ষণ ধরে ঐরূপভাবে দুয়া ও প্রার্থনা করেছেন ও ঐ মহিলার সর্বশেষ আকাঙ্খা, জান্নাতে যাওয়া যা যথাযথ পেয়েছেন তার সুসংবাদ প্রদান করেছেন।

মহান নেতার সফলতার প্রথম গুপ্ত বিষয়ঃ

প্রতি মানুষের গুণের যথাযথ বিচার-বিবেচনা ও প্রত্যেকের প্রতি একান্ত গভীর মনােযােগ প্রদান। এ গুগুভেদের মূল নিশ্চয় মানুষের এক মহা উদ্দেশ্য হলাে প্রশংসা অর্জন করা ও তার কর্মফলের স্বীকৃতি পাওয়া। সকল সৃষ্ট জীবের মধ্যে মানুষের উন্নত বৈশিষ্ট্যের প্রধানতম গােপন রহস্য হলাে তাকে পুরস্কৃত করা। আর এটিই মানুষের কৃতকর্মের জন্য মূল শক্তি। এটি মানুষকে একটি উন্নত চরিত্র ও সঞ্চালনশক্তি হিসেবে অনুরণিত করতে থাকে। মানবসত্ত্বা অবশ্যই তার মালিকের প্রতি দয়াবান ও বিনয়ী। সুতরাং সে তার কর্মফলের স্বীকৃতি বা প্রশংসা বা প্রতিদানের মাধ্যমে নিজেকে অনেক উর্ধ্বে উন্নীত করতে সমর্থ হয়। আবু মূসা আশয়ারী লি বলেন, এক ব্যক্তি রসূল -এর নিকট এসে জিজ্ঞাসা করলেন, এক ব্যক্তি যুদ্ধ করলেন গানিমত পাওয়ার উদ্দেশ্যে, অন্যজন যুদ্ধ করলেন বীরত্ব প্রকাশের উদ্দেশ্যে আর তৃতীয় ব্যক্তি যুদ্ধ করলেন আত্ম প্রকাশের জন্য তাদের কার যুদ্ধ আল্লাহর রাস্তায় হবে? রসূল না বলেন, ঐ ব্যক্তির যুদ্ধ আল্লাহর রাস্তায় হবে যে আল্লাহর কালেমা সর্বোচ্চে আসীন করার জন্য যুদ্ধ করবে।' সুতরাং অনেক ব্যক্তি এমন যিনি তাদের নিজেদেরকে ভয়ংকর পরিস্থিতি যুদ্ধ ও মৃত্যুর ময়দানে আত্মদান করেন। তারা এরূপ কেন করে? সে এজন্য করে যাতে তার সত্ত্বা একটা প্রশংসদীয় স্বীকৃতি অর্জন করতে পারে। সে তার অবস্থান উর্ধ্বে আরােহন করার জন্য এটা করে । বিচারের দিনে বান্দা তার প্রভুর সমীপে বলবেন আমি শহীদ হিসেবে মৃত্যু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আপনার রাস্তায় যুদ্ধ করেছিলাম। আল্লাহ বলবেন; তুমি মিথ্যা বলছ । তুমি এ জন্য যুদ্ধ করেছ যে, তােমাকে একজন মহাবীর বলা হবে। যা তােমাকে বলা হয়েছে। তখন তার মাথা নিচে দিয়ে পা ধরে টেনে হিচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।”

শাখা।

৭. সহীহ বুখারী কিতাবুল জিহাদ হাদীস নং ২৬৭৭ *. সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৩৬৩৫

যেখানে মুসলিম জাতির পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে সকলে ঈমানের বিনিময়ে তার জীবনের সকল কিছু ত্যাগ করে, ক্ষুধায় ধৈর্য ধারণ করে, নামাযে একান্ত অবনত হয়, মানসম্মান ত্যাগ করে, সেখানে তার পরিণতি ঐরূপ হােক নিশ্চয় কোনাে মুসলিমের নিকট তা গ্রহণযােগ্য না। আত্মত্যাগ করা ও মনােনিবেশ প্রদান। মানবসত্বা এমন যে, তার দিকে একান্ত মনােনিবেশ করা হােক, এটাই গভীরভাবে সে আশা করে। যা কুরআনে কারীমে বারংবার উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন

لقد أن لا إليك كتابا فيه ذگرگه.

অর্থ : নিশ্চয় আমি তােমাদের প্রতি এমন কিতাব অবতীর্ণ করেছি যাতে তােমাদের জন্য উপদেশ আছে।” যে কুরআনের মধ্যে তােমাদের উপদেশ অর্থাৎ তােমাদের সম্মান ও আত্মমর্যাদা।” ইতিহাস গ্রন্থে বলা হয়েছে আমরা ও আবদ মুনাফের পরিবার সম্মানের সাথে বক্তব্য পেশ করছি যে, আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত দুইটি প্রতিযােগী ঘােড়া হব। যতক্ষণ আমাদের মাঝে একজন নবী হবেন যিনি আমাদেরকে পরামর্শ ও উপদেশ দিবেন। সম্মাননা প্রদানের দিন । কোনাে প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মচারীরা কাজ করেছেন। সে সকল কর্মচারীর জন্য হৃদয়স্পর্শী দিক হলাে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে কর্মচারীদের সম্মান নিশ্চিত করার দিন। এমন হতে পারে যে, এখনও কর্মরত, কেহ কাজ সমাপ্ত করেছে, কেহ বা দূরে আছে সকলেই এ বিষয়ে একই মনােভাব পােষণ করেন। আর তাদের প্রতি সম্মান বলতে এটা নয় যে, তাদেরকে কোনাে বড় উপহার প্রদান করা হােক; বরং তাদের প্রতি আস্থা বা কর্মের প্রশংসা বা কর্মফলের স্বীকৃতি প্রদান করা যথেষ্ট হতে পারে তা খুবই বড় বা ছােট আর অনেকে তা অতি অল্প দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখবেনও কিন্তু যিনি

. আম্বিয়া-১০ ১০. তাফসীর ইবনে কাসীর

কোনাে কাজে বিশেষ ব্যক্তি হিসেবে এ ভূমিকা রাখতে পারবেন তিনি অতি উচ্চ হিসেবে বিবেচিত হবেন। মহান নেতা নবী করীম তাঁর জীবনে নেতৃত্বের গভীর প্রেরণাময় অসম দৃষ্টান্ত ঐ প্রকার কাজের স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে দেখিয়েছেন। তিনি যথাযথ মূল্যায়ন ও একান্ত মনােনিবেশ করেছেন ঐ সকল ব্যক্তিগণের প্রতি যারা ইসলাম গ্রহণ করে তার অনুগত হয়েছেন তাই সে যদি এক মুহূর্তের পূর্বে ও মুসলিম হয়ে থাকে। দুই নেতা ও প্রতিদ্বন্দ্বী মক্কা যেথায় নবী ও জন্ম গ্রহণ করেছিলেন, আবু সুফিয়ান এবং হারব তথাকার একজন প্রধান নেতা ছিলেন। তিনি ছিলেন বিশেষ ব্যক্তিত্ব একজন নেতা একজন সুবক্তা, একজন ব্যবসায়ী এবং মক্কায় একজন প্রসিদ্ধ ব্যক্তি। তিনি এমন ব্যক্তি ছিলেন যার মান সম্মান ও প্রতিপত্তিতে কেহ সমকক্ষ ছিল না। যার নেতৃত্ব ও অবস্থানে কারও সংগে তুলনা করা যেত না। নতুন ডাক এল, নবী মানুষকে তাঁর অনুসরণ করতে ও দিক নির্দেশনা মত চলতে আহ্বান করলেন ও অনুপ্রাণিত করতে থাকলেন। আবু সুফিয়ান প্রথম হতেই এ দাওয়াতের পরিণতি অনুধাবন করেছিলেন যে কারণে তিনি নিজেই এ আহ্বানের বিপরীতে প্রতিবন্ধক হয়ে দাড়ালেন। এবং অবলীলাক্রমে এ দাওয়াতের প্রতিরােধ করতে থাকলেন। মক্কাতে তার অবস্থান পূর্ণভাবে ধরে রাখতে, সত্য ন্যায়ের বিপরীতে নিজ আধিপত্যের লাগাম দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে সচেষ্ট থাকল। মক্কাতে তার শ্রেষ্ঠত্বের অবস্থানের কারণে নবী একা এর দিকে ঘৃণার মনােভাব ছিল ব্যক্ত। এ কারণে নবী মুহাম্মাদ গলা ও তাঁর সাহাবীগণকে চরমভাবে ভােগ করতে হয়েছে তার বর্বরতা ও নৃশংসতার ভয়ানক পরিণতি, মানহানির মিথ্যা অপবাদ, মিথ্যা কলংক, সর্বশেষ সর্দারের ব্যঙ্গবিদ্রুপ, উপহাস-ও অবজ্ঞা।

মুহাজির পরিশেষে তিনি মাতৃভূমি ত্যাগ করলেন। ভালবাসায় সিক্ত হলেন। ভালবাসা ও শ্রদ্ধায় পূর্ণ এক বসতিতে উপনীত হলেন। মদিনা পরিচালনার দিকে আত্মনিমগ্ন করলেন। কিন্তু মক্কার প্রধান নেতা, মুহাম্মাদষ্ট কর্তৃক জাজিরাতুল আরবের আরব জনগােষ্ঠিকে সত্য পথ প্রদর্শনের বিপরীতে দাড়াতে তাঁর পিছু ছাড়লেন না। ৮ বৎসর যাবৎ মুহাম্মাদ-এর বিরুদ্ধে বদর প্রান্তর, উহুদ, খন্দক, এমনকি হুদায়বিয়াতে মক্কায় প্রবেশের বাধা দিয়ে প্রতিরােধ করতেই থাকলেন। তারপরও কি হলাে? মহান বিজয়। পরিশেষে আবু সুফিয়ান ও মক্কার নেতারা গভীরভাবে অনুধাবন করেছিল যে, নতুন দাওয়াত তার নিজস্ব শক্তিতে ধাবমান যা অপ্রতিরােধ্য। মদিনাবাসী, নবী কা ও তাঁর সাহাবীগণসহ দিবালােকে মক্কায় রওয়ানা হলেন। মক্কার ক্ষমতাধর কোনাে শক্তি তা প্রতিরােধ করতে পারল না। তবে তাদেরকে এক মহান আবেগ থমকে দিল তা ছিল মক্কায় পবিত্র কেবলা বাইতুল্লাহ। মক্কার নেতার প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন ৮ম হিজরীর ১১ই রমাদান নবী মক্কার পানে অগ্রসর হলেন। যখন তিনি আল-আদওয়া নামক স্থানে পৌছেন তিনি আবু সুফিয়ান ও তার চাচাত ভাই আবদুল্লাহ ইবনে উমাইয়ার সাক্ষাৎ পেলেন। নবী করীম এত তাদের থেকে তাঁর ওপর যে মিথ্যা অপবাদ ও বারংবার চরম আঘাত পেয়েছিলেন তার কোনােরূপ বিরূপ মনােভাব প্রকাশ করলেন না। আলী ও আবু সুফিয়ানকে বলেন: আল্লাহর রসূল -এর নিকট যাও আর সরাসরি তাকেই ঐ কথা বল, যে কথা ইউসুফ (আ)-এর সামনে তার ভাইয়েরা বলেছিল। তারা বলেছিল

قالوا تال قارك الله علينا وان الظليين .

অর্থ : তারা বলল, আল্লাহর কসম, আল্লাহ আমাদের ওপর তােমাকে প্রাধান্য দিয়েছেন, আর আমরাই ছিলাম অপরাধী।

আবু সুফিয়ান একেবারে তাই করলেন; তখন নবী করীম বললেন, যা ইউসুফ (আ) তার ভাইদের বলেছিলেন

তাকে

قال لا تثريب عليه اليوم يفر الله لكم وهو از حه الجيين.

অর্থ : আজ তােমাদের প্রতি আমার পক্ষ হতে কোনাে ভৎসনা বা অভিযােগ নেই। আল্লাহ তােমাদের ক্ষমা করুন, যারা ক্ষমা করেন তাদের প্রতি তিনি মহান দয়াবান।১-১২ আবু সুফিয়ান যিনি খ্যাতি পছন্দ করতেন। আব্বাস হত বলেন : হে আল্লাহর রসূল! আবু সুফিয়ান এমন ব্যক্তি যিনি আত্মসম্মান পছন্দ করেন। সুতরাং তার জন্য কিছু করেন। নবী তাতে সম্মত হয়ে বলেন : যে আবু সুফিয়ানের ঘরে ঢুকবে সে নিরাপদ। যে আবু সুফিয়ানের বাড়ির দরজায় ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিবে সে নিরাপদ। যারা পবিত্র মসজিদে হারামে প্রবেশ করবে তারাও নিরাপদ। অনুরূপভাবে যারা মসজিদে ও তাদের বাড়িতে ঢুকে দরজা বন্ধ করবে তারাও। আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে বলুন, ঐ ব্যক্তি কতই না সম্মানিত হন, যার বাড়ি যুদ্ধের সময় নিরাপদ ও শংকামুক্ত ঘােষণা করা হয়। আবু সুফিয়ানের প্রতি মহান নবীর এহেন মহানুভবতা শুধু সম্মান প্রকাশ হয়নি বরং এমন ব্যক্তির ওপর সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হয়েছে যিনি মানুষের মাঝে বিশেষ ব্যক্তি ছিলেন। মানুষ তার নেতৃত্বের অনুগত হতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল আর তার শত্রুদেরকেও তারা চিনে ফেলেছিল। যে কারণে এটা সত্য নয় যে, তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণের মাধ্যমে সম্মান অর্জন করেছেন ও তার অবস্থান নষ্ট করেছেন বা ইসলাম গ্রহণ করার কারণে তার স্তর নিয়ে নেমে গেছে।

১৯. ইউসুফ-৯২ ১২. আল বানী ফিকহছিরাহ পৃ:৩৭৬ ১৩. আবু দাউদ হাদীস নং ২৬৬৯

সত্যই মহামানব আপনি কি তার মত নেতা, বা নীতি নির্ধারক পেয়েছেন? যে নেতা মাত্র কিছুদিন পূর্বেও তাঁর শত্রু ছিলেন ও তাঁর প্রতি অসম্মত ছিলেন মাত্র ইসলাম গ্রহণেই তিনি তার মান সম্মান ও সম্রমের প্রতি গভীর দৃষ্টি রেখেছেন। আবু সুফিয়ানের সম্মান ও নেতৃত্ব সুসংরক্ষণ করা হয়। তার বাড়ি ছিল সকলের জন্য নিরাপত্তাস্থল ও প্রশ্রয়স্থল যারা সেখানে প্রবেশ করবে। এটা কত মহান শ্রদ্ধাবােধ ছিল যে, তিনি মক্কায় পবিত্র মসজিদের পূর্বে আবু সুফিয়ানের বাড়ি উল্লেখ করেছেন। অথচ সকলের এ বিষয় জানা যে প্রাচীন এ মসজিদই সম্মানের উচ্চস্তরে, সান্নিধ্য অর্জনের প্রণিধানযােগ্য ও অন্যান্য ঘর হতে উচ্চতর অবস্থানেই সমাসীন। হ্যা এটাই সত্য ধর্ম যা হৃদয় স্পর্শ করে ও মনের মাধুরীকে দোলা দেয়। সুতরাং যে একবার এ ধর্মের সংগে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে এ মহান আভিজাত্য, মহত্ব ও চমৎকার সুউচ্চ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ চিত্তপ্রকর্ষ মহান ব্যক্তির সান্নিধ্যে আসে তার আর অন্য কিছু ভাবার অবকাশ থাকে না। এটা এমনই এক ধর্ম যা দায়িত্বের সর্বশেষ স্তরের দায়িত্ববান করে, মমত্ববােধের প্রতি অনুভূতিশীল ও অন্তরাত্মা পরিশুদ্ধ করে। সম্মাননা প্রদান ও সম্ভ্রম রক্ষার প্রতিক্রিয়া আবু সুফিয়ান অতি দ্রুত দৌড়াতে দৌড়াতে মক্কা পৌছেন ও সর্বোচ্চ আওয়াজে চিৎকার দিয়ে বলতে থাকলেন: ওহে কুরাইশরা! মুহাম্মাদ তােমাদের দিকে চলে আসছে, তাকে কেউ প্রতিরােধ করতে পারবে না । তােমাদের মধ্যে যে আবু সুফিয়ানের ঘরে ঢুকবে সে নিরাপদ থাকবে । তারা বলল : আল্লাহ তােমাকে ধ্বংস করুক। তােমার ঘর আমাদেরকে উপকার করবে না। তিনি বলেন : যারা তাদের নিজেদের বাড়ির দরজা বন্ধ করবে তারাও নিরাপদ আবার যারা মসজিদে হারামে প্রবেশ করবে তারাও নিরাপদ। মানুষেরা তাদের বাড়িতে ফিরে গেল ও অনেকে মসজিদে গেল।

বিজয় হয়ে গেল। নির্দ্বিধায় ক্ষমা ও অনুমােদন হলাে। মক্কার লােকেরা দলে দলে ইসলামের শাস্তি সুধা পান করল। মহান ব্যক্তিবর্গ কোনাে মহান নেতার জীবনী পড়ন, যিনি তার নেতৃত্বে অন্যদের চেয়ে মহত্ব অর্জন করেছেন ও যার নাম প্রশংসার ঘ্রাণে বিমােহীত হয়েছে ও যার সুনাম বিচ্ছুরিত হয়েছে, এ রকম একজন নেতার জীবনীতে এমন কিছু বিশেষ দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ মিলবে যার কারণে আম-জনতা তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। তার প্রচেষ্টা আবাল বৃদ্ধ বর্ণিত নির্বিশেষে সকলকে আকর্ষিত করেছে। তাতে তার উদ্দেশ্য পূর্ণ হতে প্রয়াশ পেয়েছে ও সকলের ভালবাসায় সিক্ত হয়েছে, সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে ঐ সমস্ত সকল নেতাগণই মহান নেতা মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ -এর বিদ্যাপীঠের নগন্য ছাত্র মাত্র। নবী আজ -এর জীবনী একটা গভীরতর মহাসাগর যার মাঝে পড়ে আছে মহামূল্যবান রত্মপাথর হীরা-চুন্নি, মনিমুক্তা যা হচ্ছে তার নেতৃত্বের পিছনে লুক্কায়িত রহস্যসমূহ। যে মহাসাগর হতে আহরণ কর

| বারতা। তিনি কারও সাথে মিলিত হলে তার প্রতি পূর্ণ মনােনিবেশ সহকারে সম্পূর্ণ চেহারা তার দিকে দিয়ে কথা বলতেন: আমর ইবনে আস বর্ণনা করেন : নবী যখন কারও প্রতি মনােনিবেশ করতেন তখন তিনি স্বীয় মুখমণ্ডল তার দিকে সম্পূর্ণ ফিরাতেন এবং অত্যন্ত একান্তভাবে তাদের সাথেই কথা বলতেন। তিনি যখন আমার দিকে মনোেযােগ দিতেন তখন তার চেহারা সম্পূর্ণ আমার দিকে এতটাই ফেরাতেন যে, আমি ভাবতাম আমি সকলের চেয়ে অধিক প্রিয়। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহ রসূল! আমি কি অধিকতর ভালাে না আবু বকর? তিনি বললেন, আবু বকর” তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহ রসূল! আমি অধিকতর ভালাে না ওমর? তিনি নবী বললেন, “ওমর” তখন আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি অধিক ভালাে

ওসমান? তিনি (নবী) বললেন, “ওসমান” আমি আল্লাহর রসূলের

১৪. শহহে মায়ানী আল-আছার লিস্তাহাবী (৩/৩২০)

নিকট যা জিজ্ঞাসা করেছি তিনি সত্য বলেছেন। এরপর আমি আর প্রশ্ন না করাটাই পছন্দ করলাম। এ মনােনিবেশের প্রতি লক্ষ্য করুন। যা নবী করীম ও আমর ইবনুল আসের দিকে করেছিলেন। কি অভিভূতই না ছিল তার মনােনিবেশ? নবী করীম তার মহান ও সম্পূর্ণ মনােযােগ এবং সাবলীল দৃষ্টি তার প্রতি দিলেন। তিনি স্বাভাবিকভাবে তাঁর সমস্ত মুখমণ্ডল তার দিকে ফিরালেন। যাতে তিনি যার সাথে কথা বলছেন তিনি যেন খুব স্বাভাবিকভাবে তাকে গ্রহণ করেন এবং তাদের মধ্যে সাক্ষাৎটা যেন প্রশস্ত হয়। আমর ইবনুল আসের প্রতি সম্পূর্ণ মনােযােগ দেয়ার কারণে তিনি ভাবতে পারলেন যে, তিনি আবু বকরের চেয়ে অধিক ভাল যিনি ইসলামের পিলার যিনি ইসলামের অর্ধেক হিসেবে বিবেচ্য, যার সর্বোচ্চ আসন সম্পর্কে সকলে জ্ঞাত, যার উচ্চ মর্যাদা, সকল জ্ঞানী ব্যক্তিদের নিকট প্রণিধানযােগ্য। এমনটি আমর নিজেই আবু বকর, ওমর, ওসমানের উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে সম্যক অবগত থাকা সত্ত্বেও তার প্রতি মহান নবীর একান্ত মনোেযােগ ও বন্ধুত্বসুলভ আচরণ এতটাই আপুত করেছিল যে, তিনি তা ভুলে গেছিলেন। বিশেষ প্রয়ােজন যাদের আনাস অপু বলেন, মানবিক বিকারগ্রস্থ এক মহিলা বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনার থেকে কিছু চাই, তিনি বললেন হে উমুক ও উমুকের মা! তােমার পছন্দ মত কোনাে এক রাস্তায় আমার সংগে দেখা করতে পারলে তাহলে তােমার প্রয়ােজন মিটানাের ব্যবস্থা করতে পারব। তিনি তাকে রাস্তার পাশে নিয়ে তার প্রয়ােজন মিটালেন। নবীর আহ্বানটি এমনই ছিল হে উমুক ও উমকের মা! তােমার পছন্দমত কোনাে রাস্তায় আমার সংগে সাক্ষাৎ করতে পার তাহলে তােমার প্রয়ােজন

১৫. জামে তিরমিযী হাদীস নং৩৩৫ ১৬. সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৪১৪৪

মিটাতে পারব। এ স্বীকারুক্তিটি এমনই এক মহিলার প্রতি ছিল যিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যপূর্ণ ছিল না। সাইয়েদুল মুরসালিন -এর পক্ষ হতে এ মহিলার প্রতি এ সান্ত্বনা ও সাহায্য প্রদানের মাধ্যমে দ্বীন প্রচারে কি প্রভাব পড়তে পারে? এমন কিছুই

কিন্তু প্রজ্ঞাবান প্রশিক্ষক, মহান নেতা ও শেষ নবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ এক মহিলার ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষা করে তার তাৎক্ষণিক প্রয়ােজনীয়তা বাস্তবে পরিণত করতে দ্বিধা করলেন না। তিনি জানালেন ও বাস্তবে পরিণত করলেন যে, নবুওয়াতের প্রকাশ হয়েছে মানুষের শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে আর প্রত্যেকে প্রত্যেকের স্তর বিশেষে সকলের আত্মতৃপ্তি সংরক্ষিত হয় তাই করতে যদিও ঐ ব্যক্তি মানসিকভাবে প্রতিবন্ধিও হয়। আপনি কি কখনও দেখেছেন, শুনেছেন, পড়েছেন বা গভীরভাবে জেনেছেন যে, এমন মানসিক প্রতিবন্ধির মত ব্যক্তির প্রতি কোনাে ব্যক্তি এমন গভীরভাবে তার প্রয়ােজন পূর্ণ করার জন্য যথাযথ এগিয়ে আসে বা এমন সুমধুর ব্যবহার করে? সকল সৃষ্টের প্রতি করুণা প্রদর্শন। রসূলুল্লাহ সম্পর্কে আল্লাহ রব্বল আলামীনের মহান উক্তি যে,

وما ارسلناك الا خم؛ عاليين.

অর্থ : তাকে পাঠান হয়েছে সকল সৃষ্টের প্রতি করুণা বা রহমত স্বরূপ। আমরা কি গভীরভাবে সকল সৃষ্টের প্রতি বাক্যটির প্রতি চিন্তা ও গবেষণা করে দেখেছি? এ সকল সৃষ্ট শব্দটি সকল প্রকার জীবজন্তু ও জড় পদার্থসহ সকল মানবকুলকে সমন্বয় করে। যার মধ্যে ঐ সকল ব্যক্তিও আছে যারা শারিরীক মানসিকভাবে বিকলাঙ্গ বা প্রতিবন্ধী। আমি ঐ ব্যক্তিকে অপছন্দ করছি, যিনি এ সকল বস্তু পড়ে জেনে ও ঐ মহান নবীর ওপর দরূদ পড়ছেন না। হে আল্লাহ যিনি আমাদের ও সকল কিছুর প্রতি করুণা ও দয়াবান, তার প্রতি আপনি রহমত নাজিল করুন।

* ১৭, আৰীয়া-২১: ১০৭

মুখামুখি আনাস , বলেন : যখন কোনাে ব্যক্তি নবী করীম কাে-এর সাথে সাক্ষাৎ করতেন ও মােসাফাহা করতেন, ঐ ব্যক্তি তার হাত না ছাড়া পর্যন্ত তিনি হাত ছেড়ে দিতেন না। তিনি (নবী) তার চেহারা তার থেকে অন্য দিকে ফিরাতেন না যতক্ষণ ঐ ব্যক্তি না ফিরাতেন। ঐ ব্যক্তি যতক্ষণ সংগ দিতেন ততক্ষণ তিনি তার অবস্থান পরিবর্তন করতেন না।” আমি অবধারিতভাবে নিশ্চিত যে, ওপরে বর্ণিত ঘটনায় যে দায়িত্ববােধ ও যে প্রেরণা প্রদান করা হয়েছে, তা যদি আমরা প্রয়ােগ করি তাহলে অতি অবশ্যই আমরা জনগণের এমন নেতা ও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব হব যা সকলেই উপলব্ধি করবে। গভীর ভালবাসা, অনুপ্রেরণা ও সুবিস্তীর্ণ উদ্দীপনার ব্যাপকতা আপনি অনুভব করবেন। ঐ ব্যক্তির প্রতি যিনি আপনার সামনে অবিচলভাবে দাড়িয়ে আপনার সাথে করমর্দনে ব্যাপ্ত ও আপনার বিষয় গভীর মনােযােগের সাথে সমাধানে ব্যস্ত। আপনার সাথে যখন কেহ এরূপ ব্যবহার করবে আপনি তাকে ভাল না বেসে পারবেন? আপনার প্রতি যিনি এমনভাবে মনােনিবেশ করেছেন তার প্রতি অনুপ্রাণিত

হয়ে পারা কি কারও পক্ষে সম্ভব? এক দুর্বল মহিলা, একটি বালিশ ও ভালবাসা যখন আদী ইবনে হাতিম ইসলাম গ্রহণ করার জন্য নবী করীম -এর নিকট আসলেন। তিনি বলেন, নবী উঠে আমার সাথে মিলিত হলেন। আল্লাহর ওয়াস্তে তিনি তাঁর বাড়িতে আমাকে আতিথেয়তার জন্য নিচ্ছিলেন। পথে একজন বৃদ্ধা ও দুর্বল মহিলার সংগে সাক্ষাৎ হলাে। যে মহিলা তাকে থামালেন। মহিলার কাজ মিটানাের জন্য দীর্ঘক্ষণ যাবৎ অপেক্ষা করলেন। আদী বলেন: তখন আমি মনে মনে বললাম “এ ব্যক্তি নিশ্চিত একজন বাদশাহ নয়”।

১৮. সুনানে তিরমিযী-হাদীস নং ২৫০৩

তিনি বলেন, এরপর নবী করীম আমাকে নিয়ে যেতে থাকলেন। আমরা তাঁর বাড়িতে পৌছলাম। তিনি খেজুরের পাতা ভর্তি একটা বালিশ নিয়ে আমার দিকে ছুড়ে দিয়ে বললেন, এটার ওপর ভর করে বস। আমি বললাম, না আপনি ওটার ওপর ভর দিয়ে বসুন। তিনি বললেন, না তুমিই বস। তখন আমি তার ওপর ভর করে বসলাম। আর নবী করীম (সা) মাটিতে বসলেন, তখন আমি আমার নিজেকে বললাম, আল্লাহর কসম! আমি নিশ্চিত কোনাে বাদশাহর সাথে তাকে তুলনা করব না।” প্রথম অধ্যায়ের মুক্তদানা সাধারণ জনগণের স্বাভাবিক স্বভাব যে, তার থেকে উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিগণকে ভক্তি শ্রদ্ধা করে থাকে। মানুষ মাত্রই এমনটা স্বাভাবিক। সাধারণ জনগণের এ মনােভাবের ব্যত্যয় ঘটে ঐ সময়, যখন উক্ত বিশেষ ব্যক্তি সাধারণ জনগণ, গরিব ও নিম্নবিত্তদের সংগে বিরূপ মানসিকতা প্রকাশ করে। এমনকি আপনি দেখবেন কেহ কেহ বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি পর্যায়ে না হয়েও সাধারণ মানুষের প্রতি বিশেষ সুদৃষ্টি দেয়ার কারণে ও তাদের প্রতি মমত্ববােধ প্রকাশ করায় যিনি বিশেষ প্রশংসার পাত্র হন। আবার দেখবেন সমাজের উচ্চবিত্ত অনেকে সাধারণ জনগণকে ভালবাসাপ্রীতি প্রদর্শন করার কারণে তাকে সমাজে বিশেষ স্থান দেয়া হচ্ছে। আবার সাধারণ জনগণের সংগে ঐরূপ ভালাে আচরণ না করার কারণে তিনি প্রশংসা হারাচ্ছেন। যদিও সাধারণ জনগণ ব্যস্ত থাকে ও সমাজে বিশেষ কোনাে প্রভাব ফেলতে উচ্চ বিত্তদের পর্যায়ে দেখা যায় না। কিন্তু এরা যখন কোনাে ব্যক্তিকে বিশেষ মর্যাদা দিতে থাকবে। তিনি একক নেতার পরিণত হবেন। আর আপনি জেনে রাখুন ঐ ব্যক্তি এমন মহান নেতায় রূপান্তরিত হবেন যা আপনার চক্ষু কখনও দেখেনি আর আপনার কান কখনও তা শুনেনি।

১৯. তাবাকাত হাদীস নং ২৮৪, আল-বিদায়া ওয়ান্নেহায়া ৫/৭৫

প্রথম মুক্তদানা আবু রেফায়া বর্ণনা করেন: আমি নবী করীম -এর নিকট এমন সময় আসলাম যখন তিনি হিতােপদেশ দিচ্ছিলেন। আমি বললাম: হে আল্লাহর রসূল! একজন ব্যক্তি যিনি দ্বীন সম্পর্কে কিছু জানে না তিনি দ্বীন সম্পর্কে জানতে চায়। আল্লাহর রসূল ও আমার দিকে তাকালেন। তিনি তাঁর বক্তব্য বন্ধ করে আমার কাছে আসলেন। তাকে একটি আসন দেয়া হলাে মনে হলাে তার পায়া লােহার। আল্লাহর রসূল তার ওপর বসলেন ও আল্লাহ প্রদত্ত শিক্ষা আমাকে শিখাতে লাগলেন। এরপর তিনি (মেম্বারে)ফিরে গেলেন তার বক্তব্য প্রদানের জন্যও তা যথাযথ সম্পন্ন করলেন। স্মরণীয় একজন মহান ও সফল নেতা হওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্য সকলের প্রতি মনােযােগী হতে হবে। তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করে, তাদের কর্মের প্রশংসা বা বিনিময় নিশ্চিত করতে হবে। সকল সত্তার স্রষ্টা, করুণাময় মহান আল্লাহ বলেন

و إذا جاءك النيين يؤمنون باینا فقل له عليه كتب ربه على

و

الحتة اه من قبل منگنه شزء ابجهالة ث تاب من بعيره و ت

فون چیه. أضلع فان

অর্থ : আমার আয়াতসমূহের ওপর যারা ঈমান এনেছে তারা যখন আপনার নিকট আসবে তাদের বলুন : আপনাদের ওপর সালাম। তােমাদের রব নিজ থেকে রহমত নির্ধারণ করেছেন এ বিষয়ে যে, তােমাদের কেহ অসাবধানতা বশত কোনাে খারাপ কাজ করে ফেলল তারপর তওবা করে ও ভাল কাজ করে তাহলে তিনি (আল্লাহ) ক্ষমাশীল ও করুণাময়।

২০, সহীহ মুসলিম-হাদীস নং ১৫০৬ ২১. আল-আনয়াম- ৬: ৫৪

যারা আমার আয়াতসমূহের ওপর ঈমান রাখে তারা যখন আপনার নিকট আসে তারা ঐ সকল ব্যক্তি যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করেছেন তাদেরকে আপনি বলুন; তােমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হােক। এটা এ জন্য যে, তাদের হৃদয় সুবিন্যস্ত হবে ও তাদেরকে মূল্যায়ন করা হবে। এ আয়াতের দিকে লক্ষ্য করে নবী করীম তাদের (সাহাবীদের) সাথে দেখা হলে তিনিই প্রথম সালাম দিতেন।

২২. জুবদাতুত্তাফসীর মিম ফাতহুল কাদীর পৃ:১৭৯

বইয়ের নাম: Leadership - নেতৃত্ব প্রদান
লেখকের নাম: সূলাইমান বিন আওয়াদ ক্বিয়ান
প্রকাশনীঃ পিস পাবলিকেশন
ধরণ: আত্ম-উন্নয়ন ও মেডিটেশন ইসলামিক বই
ক্যাটাগরি: অনুপ্রেরণামূলক বই pdf
মোট পেজ: ২৪১ পেজ

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.